গাবরাখালী পাহাড় থেকে দেখা যায় মেঘালয়ের মেঘ
বাংলাদেশ প্রতিদিন: চারপাশে ছোট-বড় টিলা দাঁড়িয়ে আছে ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো। ধীর পায়ে তার ওপর উঠে উত্তরে তাকালেই চোখে পড়ে মেঘালয় রাজ্যের তুরা পাহাড়। সীমান্তের ওপারে উঁচু ওই নীল পাহাড় থেকে পাখিদের সঙ্গে উড়ে আসে সাদা সাদা মেঘ। কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে নির্বিঘ্নে ভেসে আসে গারো পাহাড়ে। সবুজ অরণ্য, পাখিদের কলতান ও ছোট ছোট মেঘরাশি- এই তিন মিলে পর্যটকের মনে তৈরি করে এক মোহময় বিভ্রম। গারো পাহাড়ের ধ্যানমগ্ন প্রতিকৃতি সৌন্দর্যপিপাসুদের মন কেড়ে নেয়।
ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা এই দর্শনীয় জায়গাটির নাম গাবরাখালী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এই গারো পাহাড়েই ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও হালুয়াঘাট উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হচ্ছে গাবরাখালী গারো হিল পর্যটন কেন্দ্র।সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা মহামারী ঠেকাতে সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে যখন গ্রামীণ অর্থনীতিতে কিছুটা ধীরগতি দেখা দিয়েছে, তখন ময়মনসিংহের উত্তরের সীমান্তে গারো পাহাড়ে চলছে অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ। একটি পর্যটন কেন্দ্র ঘিরে সেখানে গড়ে উঠছে দোকানপাট, ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে গৃহীত হচ্ছে আয়বর্ধক কর্মকান্ড। ফলে গারো পাহাড়ের সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটছে। স্থানীয়রা জানালেন, এ পর্যটন কেন্দ্রটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে, তৈরি হবে কর্মসংস্থানেরও। জানা গেছে, জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ও ময়মনসিংহের সাবেক জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান গাবরাখালী পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান এনডিসির দিকনির্দেশনায় বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন কর্মকান্ড এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক। আর পর্যটন কেন্দ্রটি বাস্তবায়ন কর্মকান্ড সমন্বয় করছেন হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই পর্যটন কেন্দ্রের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে দর্শনার্থীদের চোখ ফেলা দায়।
গারো পাহাড়ে গড়ে তোলা এই পিকনিক স্পটটি শুধু পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটিকে ঘিরে স্থানীয় মানুষের জন্য নেওয়া হচ্ছে নানা আয়বর্ধক কর্মকান্ড। এ এলাকায় কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়ের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সব বয়সের মানুষকে। বাইরের এলাকা থেকেও পর্যটকরা আসেন এই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য। পর্যটকদের জন্য রয়েছে নানা সুবিধা। এ কারণে গারো পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্রটি দিন দিন মন কেড়ে নিচ্ছে দর্শনার্থীদের। প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটকদের আনা গোনা। করোনা মহামারীর কারণে বিধিনিষেধ সত্ত্বেও ঈদ ও ঈদের পর গত দুই দিনে এই পর্যটন কেন্দ্রে প্রায় ১১ হাজার দর্শনার্থী ঘুরে গেছেন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। উপজেলা প্রশাসন জানায়, পূর্বে হাজং ও বানাই জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল এ গাবরাখালী গ্রামে। এর উত্তর প্রান্ত সংলগ্ন এলাকায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমানা। এর ১২৫ একর এলাকাজুড়ে ছোট-বড় ১৬৭টি টিলা নিয়ে গঠিত পর্যটন কেন্দ্রটির টিলাগুলো প্রায় ৭০ ফুট থেকে ২০০ ফুট উঁচু। এগুলো আবার চিতাখলা টিলা, যশুর টিলা, মিতালি টিলা, বাতাসি টিলা এমন বাহারি নামে পরিচিত। এই টিলার ওপর দাঁড়িয়ে সীমান্তের ওপারে মেঘালয় রাজ্যের মানুষের জীবন ও জীবিকার দৃশ্য দেখা যায়। সন্ধ্যায় ভারতের সীমানার দিকে নীলাভ আলোর বিচ্ছুরণ দেখতে খুবই সুন্দর।
কী আছে এখানে : এই পর্যটন কেন্দ্রকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য প্রবেশ মুখেই রয়েছে সুউচ্চ পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলের মনোরম ঝরনাধারা। পাহাড়ের মাঝে অপেক্ষাকৃত নিচু লেকে রয়েছে প্যাডেল বোট, ঝুলন্ত ব্রিজ। পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য রয়েছে রেস্ট হাউস। এই রেস্ট হাউস দুটোর নাম গারো ভাষায় জারামবং (পূর্ণিমা) ও ফ্রিংতাল (শুকতারা)। আরও আছে সুইমিং পুল, ওয়াচ টাওয়ারসহ নানা ধরনের বিনোদন উপকরণ। পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে রোপণ করা হয়েছে কাজুবাদাম, আগর (সুগন্ধি), চা, কফি। লেকজুড়েই দেখা মিলবে দেশীয় হাঁসের কোলাহল। এই লেকেই স্থানীয় এলাকাবাসীর আয় বাড়ানোর জন্য মৎস্য চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের কিনার বেয়ে ভারত থেকে বয়ে আসা ছোট ঝরনা ধারায় রাবার ড্যাম দিয়ে পানি সংরক্ষণ করে বোরো মৌসুমে সেচ দেওয়া হয়। টিলায় বসবাসরত স্যাটেলারদের জন্য উপজেলা প্রশাসন আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সমবায়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার জন্যও গৃহীত হচ্ছে আয়বর্ধক কর্মকান্ড, পাশাপাশি স্থানীয় বেকার যুবকদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজের আওতায় আনা হচ্ছে।
হালুয়াঘাটে হবে মনোমুগ্ধকর পর্যটন কেন্দ্র, গারো পাহাড় ।
বিজয় বাংলাঃ সম্ভাবনার নতুন দ্বারপ্রান্তে হালুয়াঘাট উপজেলা। দেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার জন্যে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন ও হালুয়াঘাট উপজেলা পরিষদ যৌথভাবে হালুয়াঘাট উপজেলায় বাংলাদেশের সিমান্তবর্তী এলাকা ভারতের “গারো পাহাড়” ঘেসা ৫ নং গাজিরভিটা ইউনিয়নের গাবরাগালি গ্রামে ১২৫ একর জায়গায় গড়ে তোলা হবে পর্যটন এলাকা।..
ইতিমধ্যে হালুয়াঘাট উপজেলা পরিষদ থেকে ৩৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জমির মাপঝোপ ও রাস্তার কাজ শুরু হয়ে গেছে ।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে হয়ত: ‘গাবড়াখালি” পাহাড় একদিন হয়ে উঠবে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র।
আজ (১৭নভেম্বর’২০), মঙ্গলবার, গাবরাখালি কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করতে আসেন, ময়মনসিংহ থেকে জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান মহোদয় ও হালুয়াঘাট উপজেলা থেকে প্রশাসনের সম্মানিত সকল কর্মকতাসহ উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম সাহেব।
উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব মাহমুদুল হক সায়েম, তিনি নিজের ফেইসবুক পোস্টে বলেন; আমাদের জাতীয় সংসদ সদস্য মহোদয় মি.জুয়েল আরেং প্রতিনিয়ত আমাদের উৎসাহ প্রদান করছেন। আমরা উনাকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি জানান, জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান মহোদয় গাবরাখালি পরিদর্শন করেছেন। তাঁর আন্তরিকতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ইউএনও মহোদয় চমৎকার কাজ করছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জনাব দেলোয়ার হোসেন সার্বক্ষণিক কাজের তদারকি করছেন।
গাবরাখালী পাহাড়ের পরিচিতি :
প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের অসিম লীলাভুমি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার গাবরাখালী ও গলইভাংগা গ্রাম।
এই দুটি গ্রামে রয়েছে ময়মনসিংহের গারো পাহাড় নামে খ্যাত এর একাংশ। এর অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দয্য মুগ্ধ করে সকল বয়সের মানুষকে।
১২৫ একর এলাকা জুড়ে ছোট-বড় ৬৭টি পাহাড় নিয়ে গাবড়াখালি পাহাড় গঠিত। পাহাড়গুলো ৭০ফুট থেকে ২০০ফুট উচু হবে (এলাকার মানুষের বর্ণনামতে) ।পাহারগুলোর বিভিন্ন নাম আছে।
যেমন- চিতাখলা টিলা, যশুর টিলা, মিতালী টিলা, বাতাসী টিলা ইত্যাদি। মিতালী টিলাতে পিকনিক করার মত জায়গা ঠিক করা আছে। পাহাড়ের মাঝখানে নীচু জমি আছে পানিতে ভরে গেলে লেক মনে হবে।
গবরাখালি’র গারো পাহাড়ের উত্তরপ্রান্তে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমানা।
দুরত্ব কতটুকু : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা থেকে গাবড়াখালি গারো পাহাড়, উত্তর পূর্ব দিকে অবস্থিত দূরত্ব ১৪.৫ কি.মি.।
কিভাবে যাওয়া যায় : হালুয়াঘাট থেকে মটর সাইকেল, মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা দিয়ে গাবরাখালি যাওয়া যায়। যেতে সময় লাগবে ৩০/৪০মিনিট ।
হালুয়াঘাটের গাবরাখালীতে গড়ে উঠছে অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র
বাংলার কাগজ : ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার গাবরাখালী গারো পাহাড়ে গড়ে উঠতে চলেছে পর্যটন কেন্দ্র। জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে প্রায় ৬৮ একর জমি নিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে চলছে এর উন্নয়ন কাজ।
গাজিরভিটা ইউনিয়নের অপরূপ সুন্দর এ পাহাড়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলতে শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান। এসময় ময়মনসিংহ রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমেদ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলাল উদ্দিন, গাজিরভিটা ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সঙ্গে ছিলেন।
জানা গেছে, হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের অপরূপ সুন্দর গাবরাখালী পাহাড়ে প্রায় ৬৮ একর জমি নিয়ে গড়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্র। এজন্য ইতোমধ্যে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক অবস্থায় নির্মিত হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার, পাহাড়ে উঠার জন্য নির্মিত হচ্ছে পাকা সিঁড়ি, থাকছে বিশ্রাম ও বসার ব্যবস্থা। এছাড়াও বনভোজনে আসা দর্শনার্থীদের কথা বিবেচনা করে তৈরি করা হচ্ছে রান্নাঘর ও টয়লেট।
জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, গারো পাহাড়ের পাদদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত গাবরাখালী পাহাড়ি গ্রামটি পর্যটন সম্ভাবনাময়। তাই এখানে প্রাথমিক অবস্থায় আমরা এর উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেছি। এ পর্যটন স্পটটি চালু হলে অর্থনৈতিকভাবে হালুয়াঘাটের মানুষ অনেক উপকৃত হবে, সৃষ্টি হবে অনেক কর্মসংস্থানের।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, সম্ভাবনাময় হালুয়াঘাটের এই পর্যটন স্পটটি চালু হলে শিল্পের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রায় এবং অর্থনৈতিক খাতকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেই সাথে বাংলাদেশের ভ্রমণ পিপাসুদের পিপাসা মিটাবে এ পর্যটন স্পট।
ময়মনসিংহের গাবরাখালী পাহাড় অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি
আজকের ময়মনসিংহঃ অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ৫ নং গাজিরভিটা ইউনিয়নের গাবরাখালী গ্রাম। এই গ্রামে আনুমানিক ৬০টি ছোট-বড় পাহাড় রয়েছে। প্রতিটি পাহাড়ের উচ্চতা আনুমানিক ৭০ থেকে ১৫০ ফুট।
সৌন্দর্যম-িত মনোমুগ্ধকর গাবরাখালী পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন।পাহাড়গুলোতে সারি সারি শাল, গজারি, সেগুন ও প্রাকৃতিক লতাপাতা আর পাহাড়ের ঢালে শ্যামল বৃক্ষরাজির মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা। আবার কোথাও গহীন জঙ্গল আর পাখির কলরব প্রকৃতিপ্রেমীদের আপন করে নেয়। ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট আর ধোবাউড়া উপজেলাকে ঘিরে রেখেছে মেঘালয়ের তুরা ও গারো পাহাড়সহ বড় বড় সব পাহাড়।
বাংলাদেশের প্রাথমিক-মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তক সমূহে এবং সমাজবিজ্ঞান ও ভূগোলসহ সাধারণ জ্ঞানের বই, বিসিএস গাইড কিংবা বিভিন্ন কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রশ্নে ‘ময়মনসিংহের গারো পাহাড়’ বলে দেশের যে বৃহত্তম পাহাড়ের কথা উল্লেখ করা হয়, তা বাস্তবতার সাথে কোনও মিল নেই। গারো পাহাড় যা আছে সব ভারতের মেঘালয়ে। স্বাধীনতাপূর্বে গাবরাখালী এলাকায় আদিবাসী হাজং ও বানাই জনগোষ্ঠির বসবাস ছিলো। বর্তমান সেখানে মুসলমান, হিন্দু, গারো জাতির বসবাস। গাবরাখালীর পাশেই ভারতীয় সীমানা। তাই এখান থেকে উপভোগ করা যায় ভারতেরও প্রাকৃতিক অপরূপ দৃশ্য। দেখা যায় ভারতীয় মানুষের কোলাহল।
সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে এই গাবড়াখালী পাহাড়ে গড়ে উঠতে পাড়ে পর্যটনকেন্দ্র। এখান থেকে প্রতি মৌসুমে কোটি কোটি টাকা সরকারী রাজস্ব আয় হতে পারে। গাবরাখালীর এক পাহাড়ে মাহবুব শাহ নামে একটি মাজার রয়েছে যা দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, মোঃ মাহবুব আলম নামে এক ব্যক্তির মাজার এটি। তিনি বিহারী ছিলেন এবং সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্বে গাবরাখালীতে এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি গাবরাখালীর পাহাড়গুলোতে গরু চরাতেন এবং সর্বদা তার কাঁধে গরুর রশি ঝুলিয়ে রাখতেন।
গাবরাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মতিউর রহমান বলেন, আমরা তখন ছোট। মোঃ মাহবুব আলম এ- অঞ্চলে ‘আলম সাধু’ নামে পরিচিত ছিলো। তিনি আমাদের দেখে তাঁর মুখে জিহ্বা দ্বারা ঠেলা মেরে সব দাঁত ফেলে দিত। আমরা তা দেখে আশ্চর্য হয়ে যেতাম। পরে জানতে পারি তাঁর মুখে কৃত্রিম দাঁত লাগানো ছিলো। তিনি ১৯৮৫-৯০ সালে মারা গেলে এখানে মাজার গড়ে ওঠে এবং প্রতি বছর ব্যাপক আয়োজনে ওরস উদযাপন হয়।
হালুয়াঘাটের গাবরাখালী গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্রের মডেল উন্মোচন করলেন জেলা প্রশাসক
ভালুকা ট্রিবিউনঃ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের গাবরাখালী গারো পাহাড়ে অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রের মডেল উন্মোচন এবং রেষ্ট হাউজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ টায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গাবরাখালী গারো পাহাড়ের পাদদেশে এই ভিত্তি প্রস্তর উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান। জেলা প্রশাসক তার সফর সঙ্গীদের নিয়ে পর্যটন কেন্দ্রের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের অগ্রগতি দেখে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। পরে সকলকে নিয়ে পর্যটন কেন্দ্রের মডেল উন্মোচন, রেষ্ট হাউজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এবং দোয়া-মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, এই প্রকল্পের কাজগুলো শেষ হলে সারা দেশে হালুয়াঘাটকে নতুন করে চেনার সুযোগ তৈরি হবে এবং অবহেলিত অত্র এলাকাটির অনেক উন্নয়ন হবে এবং অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি তিনি জেলা প্রশাসন থেকে ভবিষ্যতেও এই পর্যটন কেন্দ্রের সার্বিক সহযোগিতা করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং এই অগ্রগতির কুশীলবদের ভূয়শী প্রশংসা করেন।
এ সময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমেদ, পৌর মেয়র খাইরুল আলম ভূঞা, কৃষি অফিসার মোঃ মাসুদুর রহমান, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোঃ আলাল উদ্দিন, থানা অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান, সমবায় অফিসার মোঃ কামরুল হুদা, গাজিরভিটা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ দেলোয়ার হোসেন, প্রমুখ। উল্লেখ্য যে,পর্যটন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নির্মাণ করা হচ্ছে সুদৃশ্য প্রধান ফটক, ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, ওয়াচ টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, মনোরম লেক ও ওয়াটার বোট, ব্রিজ, স্ট্রেম্পিং রোডসহ অনেক কিছু। এতে জেলা পরিষদের বরাদ্দের পাশাপাশি হালুয়াঘাট উপজেলা পরিষদ থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহে রূপবতী গাবরাখালী
দৈনিক সময় সংবাদঃ বোরখাপরা মেয়েটির মতো রূপবতী ‘গাবরাখালী ’ এভাবে আর কতদিন নিজেকে লুকিয়ে রাখবে, ঢেকে রাখবে নিজ রূপ-লাবণ্য! সময়ের ব্যবধানে, প্রয়োজনে একদিন সে হয়তো ঠিকই ধরা দেবে। ঠিক এক সময় ভ্রমণ পিপাসুরা তাকে খুঁজে বের করে নিলো। বাস্তবে ঘটেছেও তাই।
কথা বলছি, ময়মনসিংহ নতুন পর্যটন স্পট গাবরাখালীর কথা। যার অবস্থান জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার কাছেই গাবরাখালী। ময়মনসিংহ শহর থেকে আরেক প্রকৃতিকন্যা স্থল বন্দর যাবার পথে একটু দুর্গম এলাকায় গেলে দেখা দেবে সেই রূপবতী গাবরাখালী! হিজল-করচসহ নানা প্রজাতির গাছের সমারোহ আছে এখানে, যেনো সবুজে আচ্ছাদিত। অনেকটাই মিঠাপানির বন সেই ‘রাতারগুলের’ মতোই।
গাবরাখালী! নিঃসর্গের মাঝে লুকিয়ে থাকা এক অপরূপ বনাঞ্চল। জলের সঙ্গে তার মিতালী। বর্ষার অথৈ জলে সে যেনো নবরূপে জেগে ওঠে। আপন সৌন্দর্যের সবটুকু মেলে ধরে, উজার করে দেয়। এ সময় খুলে পড়ে তার বোরখার ঘোমটাও। আগন্তুক আর পথিকদের কাছ থেকে সে নিজেকে আড়াল করে রাখে ঠিকই, কিন্তু আপন ভূবনের বাসিন্দাদের কাছে সে খুবই আধুনিক-উদার। বনের বিচিত্র সব গাছ, জলচর-স্থলচর-উভচর প্রাণি আর মাছ শিকারীদের নিয়ে তার একান্ত আপন ভূবন।
বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে গাবরাখালী একটি ‘সোয়াম্প বন। সভ্যতার ছোঁয়া বহির্ভূত প্রাকৃতিক এ বনটি যেনো নিসর্গের এক অপরূপ উদ্যান। জলকে ঘিরেই বনটির ’ইকোসিস্টেম’ তথা পুরো অস্তিত্ব নির্ভরশীল। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার একেবারে প্রান্তঃসীমায় এক নির্জন স্থানে তার বেড়ে ওঠা, প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতো বনটি আবহমান থেকে এখনও টিকে আছে, পড়ে আছে প্রকৃতিপ্রেমিদের জন্য!
ময়মনসিংহ -হালুয়াঘাট সড়ক ধরে উপজেলা থেকে উত্তরদিকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যেই গাবরাখালী অবস্থান। কিন্তু এরকম এক ব্যস্ত স্থান থেকে শতাব্দীর পর শতাব্দী কীভাবে এটি যে পর্যটকদের দৃষ্টির আড়ালে থেকে গেল, সে যেনো এক রহস্য। দুর্গমতার কারণে হয়তো এমনটি হয়েছে। বনের ঢুকলে দেখা যায়, হিজল-করচ-জারুল-বরুন-শেওড়া-বুরি আর কদমের লম্বা লম্বা সারি। গাছগুলো একটি আরেকটিকে ঘিরে ধরেছে আপন ভেবে। শতবর্ষী একেকটি হিজলগাছ নিজের ডালপালা আর পাতা দিয়ে অনেক জায়গাজুড়ে অবস্থান করছে। গোধূলির নিমুঝিমু আলো-আধাঁরিতে এক একটি হিজল গাছকে মনে হয় গভীর ধ্যানে মগ্ন একেকজন সন্ন্যাসী। বনের ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, মুর্তা, বেত, হুগলা আর শনের ঘন বন। বড়গাছগুলোর নিচের এসব ঝোপঝাড় দেখলে মনে হতে পারে, ছোটবনগুলোকে যেন এরা মায়ের মতো আদরের চাদরে ঢেকে রেখেছে। দিগন্তের ওপারের মেঘালয় পাহাড় তৈরি গভীর দৌত্যনা।
গাবরাখালী জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি বন। বিচিত্র প্রজাতির উদ্ভিদ, জলচর ও স্থলচর প্রাণির এক সমৃদ্ধ আবাসস্থল এ বন। বনের মধ্যে দেখা মেলে উদবিড়াল, গেছো ইদুর, কাঠবিড়ালী, খেকশিয়ালসহ নানা প্রজাতির প্রাণি। অনেক মেছোমাঘও বনের মধ্যে বসবাস করে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। চিল, ঈগল, ডাহুক, কানাবক, বালিহাস আর নানা প্রজাতির পাখি দাপিয়ে বেড়ায় বনের মধ্যে।
বিশেষ করে, শীতকালে পরিযায়ী পাখীর কলকাকলীতে মুখরিত থাকে এ বন। দেশিয় নানা প্রজাতির মাছে ভরপুর বনটি। স্থানীয় জেলেরা এ বনের মধ্যে নানা প্রকার ফাঁদ পেতে মাছ শিকার করে। নানা প্রকার কীটপতঙ্গ খেতে বনের মধ্যে ভিড় জমায় মাছের দল। সবমিলিয়ে নিজের সবকিছু নিয়ে বনটি যেনো এক তৃপ্ত সুখীর প্রতিচ্ছায়া। এ বনটির ব্যাপক প্রচার ও যাতায়াতের উন্নতি ঘটালে এটি হয়তো পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হতে পারে।
সম্ভাবনার নতুন দাঁড় প্রান্তে হালুয়াঘাট উপজেলা। দেশের পর্যটন শিল্প কে এগিয়ে নেয়ার জন্যে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন ও হালুয়াঘাট উপজেলা পরিষদ যৌথভাবে হালুয়াঘাট উপজেলার ৫ নং গাজিরভিটা ইউনিয়ন গাবরাগালি গ্রামে ১২৫ একর জায়গায় গড়ে তুলা হচ্ছে পর্যটন এলাকা। ইতোমধ্যে জাইকা থেকে ৪০ লাখ, এডিবি থেকে ১৬ লাখ ও হালুয়াঘাট উপেজলা পরিষদের বরাদ্দকৃত কাবিখা/কাবিটা প্রকল্প থেকে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। সর্বমোট ৬৬ লাখ টাকার কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। জমির মাপ,রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে।
গাবরাখালী সম্পর্কে হালুয়াঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম বলেন, রাতালগুলের মতোই এ বনটি। এটা নতুন পর্যটন স্পট হিসেবে বেছে নিতে পারেন প্রকৃতিপ্রেমিরা। তিনি বলেন, এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় এর পরিচিতি খুব একটা নেই। ভ্রমণের জন্য এ স্থান পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন পর্যটকরা। ইতোমধ্যে জাইকা থেকে ৪০ লাখ, এডিবি থেকে ১৬ লাখ ও হালুয়াঘাট উপেজলা পরিষদের বরাদ্দকৃত কাবিখা/কাবিটা প্রকল্প থেকে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। সর্বমোট ৬৬ লাখ টাকার কাজ বাস্তবায়ন করা হয়।